কক্সবাজারের মতো ভাসানচরেও বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের (রোহিঙ্গা) মানবিক সহায়তা কার্যক্রমের বিস্তার বাড়াতে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে সমঝোতা স্মারকে সই করেছে জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট সংস্থা।
শনিবার (৯ অক্টোবর) সচিবালয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ে শনিবার সকালে সমঝোতা স্মারকে সই করেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মহসীন ও ইউএনএইচসিআরের প্রতিনিধি জোনাস ভ্যান ডেক ক্লাউ।
#Bangladesh govt & the @UN today agreed on an MoU relating to Bhasan Char. The MoU – signed by @Refugees on behalf of UN working on the Rohingya response in Bangladesh – establishes a common protection and policy framework for the #Rohingya humanitarian response on the island.
— MUKTADIR rashid ROMEO (@muktadirnewage) October 9, 2021
এই সমঝোতার ফলে ভাসানচরে খাদ্য ও পুষ্টি, সুপেয় পানি, পয়ঃনিষ্কাশন, চিকিত্সাসহ মানবিক কার্যক্রমে সরকারকে সহযোগিতা করবে জাতিসংঘ।
এসময় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান প্রধান অতিথি এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এ বি তাজুল ইসলাম বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের সহায়তা দিয়ে আসছে জাতিসংঘ। আমরা তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। আমরা রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তর করেছি। বিভিন্ন এনজিও সেখানে রোহিঙ্গাদের চাহিদাগুলো পূরণ করছে।
জাতিসংঘ সঠিক সময়ে ভাল একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমি মনে করি এটা ভাসানচরে বাংলাদেশ সরকারকে রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখতে সহযোগিতা করবে। এটা আমাদের জন্য বড় একটি স্বস্তির বিষয়।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমি মনে করি, এ চুক্তির পর জাতিসংঘ ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তার দায়িত্ব নেবে।’
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিব বলেন, ‘বেসামরিক প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে ভাসানচরে মানবিক সহায়তা কার্যক্রম পরিচালিত হবে। বাংলাদেশ সরকার ও ইউএনএইচসিআর-এর যৌথ উদ্যোগে ‘বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকদের (এফডিএমএন) খাদ্য ও পুষ্টি, সুপেয় পানি, পয়ঃনিস্কাশন, চিকিৎসা, মিয়ানমার কারিকুলাম ও ভাষায় এফডিএমএনদের অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা এবং জীবিকায়নের ব্যবস্থা করা হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকার এখানে বসবাসরত রোহিঙ্গা ও কর্মরত জাতিসংঘ এবং এর সহযোগী সংস্থা ও দেশিয় ও আন্তর্জাতিক এনজিও কর্মীদের নিরাপত্তার বিষয় দেখাশুনা করবে।
এছাড়া, ভাসানচরে এফডিএমএনদের বসবাসের কারণে পাশ্ববর্তী স্থানীয় এলাকা ও জনগণের উপর যে প্রভাব পড়বে তা নিরসনে জাতিসংঘের সংস্থাগুলো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’
‘বর্তমানে বাংলাদেশে ১১ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আছেন। জনসংখ্যার ঘনবসতি ও পরিবেশের ঝুঁকি কমানোর লক্ষ্যে সরকার তিন হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে প্রায় এক লাখ রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে বসবাসের ব্যবস্থা করেছে।
গত ৩ ডিসেম্বর থেকে গত ৪ এপ্রিল পর্যন্ত ১৮ হাজার ৮৪৬ জন মিয়ানমারের নাগরিকদের ভাসানচরে স্থানান্তর করা হয়েছে’ যোগ করেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিব।
সচিব বলেন, ‘আমরা আশা করছি, আগামী তিন মাসে অর্থাৎ নভেম্বর, ডিসেম্বর ও জানুয়ারির মধ্যে আরও ৮০ হাজার মিয়ানমারের নাগরিককে আমরা ভাসানচরে নিয়ে যেতে পারবো। সেখানে থাকা ১৮ হাজারকে এনজিওদের সহায়তায় সরকার দেখভাল করছে। স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক এনজিওদের সহায়তায় আমরা এ কাজগুলো করছি।’
The Government of Bangladesh and the United Nations, represented by UNHCR @Refugees signed a Memorandum of Understanding relating to Bhasan Char. It establishes a common protection and policy framework for the Rohingya humanitarian response on the island. pic.twitter.com/42gGCWZ06G
— UNHCR in Bangladesh (@UNHCR_BGD) October 9, 2021
কক্সবাজারের মতো ভাসানচরেও মানবিক সহায়তায় জাতিসংঘের অংশগ্রহণ বিষয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিবকে সভাপতি করে গত ৩ জুন একটি কমিটি দেওয়া হয়েছিল জানিয়ে মো. মোহসীন বলেন, ‘এ কমিটি জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে জাতিসংঘ ভাসানচরে মানবিক সহায়তা দিতে সম্মত হয়। দুপক্ষের সঙ্গে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে এমওইউর খসড়া করা হয়েছে। সরকার তা অনুমোদন দিয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘অতি শিগগিরই এ সমঝোতা স্মারকের আলোকে অপারেশন প্ল্যানসহ বিভিন্ন কার্যক্রম শুরু করা হবে। মিয়ানমারের নাগরিকদের অবস্থানের কারণে বাংলাদেশে যে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে, এর একমাত্র সমাধান তাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন।’ প্রত্যাবসান কার্যক্রম ফলপ্রসূ করা এবং পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য জাতিসংঘের সংস্থাগুলোকে অনুরোধ জানান সচিব।
বাংলাদেশে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর-এর প্রতিনিধি বলেন, ‘এ এমওইউ রোহিঙ্গাদের জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা দেওয়ার নীতি দ্বীপে (ভাসানচর) থাকাদের জন্য প্রতিষ্ঠিত হলো। কক্সবাজারের মতো ভাসানচরেও জাতিসংঘ রোহিঙ্গাদের জরুরি প্রয়োজন মেটাতে কাজ করবে।’
এসময় পররাষ্ট্র, জননিরাপত্তা বিভাগ, এনএসআই ও জাতিসংঘের বাংলাদেশের আবাসিক সমন্বয়কারী (অন্তবর্তীকালীন) তোমু পটিয়ানেন, বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির কান্ট্রি ডিরেক্টর রিচার্ড রিগ্যান এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।